ঢাকা | বঙ্গাব্দ

রানা প্লাজা গার্মেন্টসের ধস হলো করুণ এক বাস্তবতা

  • প্রতিনিধির নাম : | নিউজ প্রকাশের তারিখ : May 3, 2025 ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ 9221 জন
রানা প্লাজা গার্মেন্টসের ধস হলো করুণ এক বাস্তবতা ছবির ক্যাপশন: স্বাধীন৭১
ad728

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালটা ছিল আর দশটা দিনের মতোই। তবে সেদিন সাভারের রানা প্লাজায় কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিকের জন্য তা হয়ে ওঠে এক বিভীষিকাময় অধ্যায়। আটতলা ভবনটি এক ঝটকায় ধসে পড়ে।

সেই মুহূর্তে ভবনের ভেতরে প্রায় ৫,০০০ শ্রমিক কাজ করছিলেন। অনেকেই আগের দিন ভবনের ফাটল দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু মালিকপক্ষের চাপ ও হুমকিতে পরদিন কাজে ফিরতে বাধ্য হন।

ভবনটি অবৈধভাবে নির্মিত ছিল, এবং অনুমতি ছাড়াই উপরের তলাগুলো যোগ করা হয়েছিল। তদুপরি, ভারী শিল্প যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য ভবনটি কাঠামোগতভাবে উপযোগী ছিল না। এইসব অবহেলা এবং দুর্নীতির ফলেই ঘটে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

উদ্ধার অভিযান ও মানবতা
ধসের পরপরই শুরু হয় এক বিশাল উদ্ধার অভিযান, যা টানা ২০ দিনেরও বেশি চলে। স্থানীয় লোকজন, ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা জীবন ঝুঁকি নিয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষ উদ্ধারে অংশ নেন। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে অনেককেই জীবিত উদ্ধার করা হলেও, অনেকেই আটকা পড়ে মারা যান। এক নারী শ্রমিককে জীবিত উদ্ধারের পর তার পা কেটে ফেলতে হয় তাকে বাঁচানোর জন্য — এমন অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে তখন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ
রানা প্লাজার ধস আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বহু আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড, যারা এই ভবনের কারখানাগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করত, সমালোচনার মুখে পড়ে। পরবর্তীতে “অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি” এবং “অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি” নামে দুটি আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়, যা গার্মেন্টস কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়।

বাংলাদেশ সরকারও অনেকগুলো আইন ও নীতিমালা সংস্কার করে, গার্মেন্টস খাতে শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।

রানা প্লাজার উত্তরাধিকার
আজও রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ নেই, কিন্তু স্মৃতি রয়ে গেছে—মায়ের কোলে হারিয়ে যাওয়া সন্তান, নিখোঁজ স্বজন, অথবা যারা বেঁচে ফিরেও আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। এই ঘটনা কেবল একটি ভবনের ধস নয়, এটি ছিল সমাজের একটি শ্রেণির প্রতি অব্যবস্থাপনা, লোভ এবং অবহেলার প্রতিচ্ছবি।


নিউজটি পোস্ট করেছেন : মোঃ ইমন চৌধুরী

কমেন্ট বক্স