আজ শুক্রবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খুলনার জিরো পয়েন্ট ও গল্লামারী মোড় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে।
এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
পক্ষান্তরে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকল ছোড়ে করে। এ সময় শিক্ষার্থীগণ পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এমত অবস্থায় ৭ জনসহ ১৬ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে,এর মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর এ ঘটনায় পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য ও গুরুতর ভাবে আহত হয়েছেন আহত পুলিশ সদস্যদের পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে গুরুতর আহত একজন পুলিশের গাড়ি চালকের অবস্থা আশংকাজনক।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্মরতারা জানিয়েছেন, বিকেল থেকে সংঘর্ষে আহত রোগীরা হাসপাতালে আসছেন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সিরাজুল ইসলাম (৬০), শাহরিয়ার নীরব (২৪), আবির (২৪), মিজান (৪৮), ফাইয়াস (২৩), রবিনা (৩২), নাবিল (২৪), মিজান (৩২), সৌরভ (২৩), শেখ তানিক (২২), মিতু (২১), তানিয়া (১৯), রাবেয়া সুলতানা(২৩) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এছাড়া আরো কয়েকজন ব্যক্তিগতভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
চিকিৎসকরা জানান, আহতের অনেকের দেহে গুলি লেগেছে এদের মধ্যে সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির কপালে রবার বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আসেন জরুরীভাবে অপারেশনের মাধ্যমে তাঁর বুলেট বের করা হয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া কমপক্ষে ৭/৮ জনের শরীবের গুলি রয়েছে। বাকীরা টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ও ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার দুপুর দুইটার দিকে শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে এ সময় পুলিশ তাদেরকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও পরে পিছু ঘটে। এরপর তারা মিছিল সহকারে মজিদ সরণি হয়ে সোনাডাঙ্গা থানার দিকে যায়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা সোনাডাঙ্গা থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন পুলিশ সদস্যরা থানার ভেতরে গিয়ে অবস্থান নেয়। পরে হরিণটানা থানায়ও ইটপাটকেল ও খালি বোতল নিক্ষেপ করে এ সময় থানার প্রধান ফটক বন্ধ ছিল।
শিক্ষার্থীরা বেলা সোয়া ৩টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছানোর পর পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয় শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে এই সংঘর্ষ এছাড়া উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় নগরীর গল্লামারী থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
বিকাল ৪ টার দিকে পুলিশ কিছুটা পিছু হটে। কিছু পুলিশ জিরো পয়েন্ট এলাকায় এবং কিছু পুলিশ গল্লামারী মোড়ে অবস্থান নেয়। কয়েক দফা শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পুলিশ কিছুটা পেছনে সরে আসতে বাধ্য হয়।
পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশের পর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে নগরীর শিববাড়ি মোড়ের দিকে যেতে চাইলে বিকাল ৬টায় গল্লামারী মোড়ে আরেকদফা সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ মুর্হুমূর্হু টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশ পিছু হটলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংঘর্ষের পর সিরাজুল ইসলাম, আবির, নীরব, নাবিল, মিজান, সৌরভ, আবদুল্লাহ, রায়েব সুলতানা রাইবা এবং রুবিনা ইয়াসমিনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের শরীরে রাবার বুলেট ও শটগানের ছররা গুলি লেগেছে।
নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীরা থানার গেটে কিছু ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেছিল। এতে কেউ আহত হয়নি।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক জানান, শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি পালন করা কথা ছিল। কিন্তু তারা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। বহু পুলিশ আহত হয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে আল শাহরিয়ার দাবি করেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল নিরস্ত্র শিক্ষার্থী ওপর পুলিশ অহেতুক টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। এতে অনেকে আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এ ব্যাপারে হত হাতের সঠিক সংখ্যা এখনও কিরে ফোন করা যায়নি।