ঢাকা | বঙ্গাব্দ

বৈষম্যকে নিয়ে ভাবতে হলে আগে বৈষম্যের পর্যালোচনা দরকার।আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী

  • আপলোড তারিখঃ 16-11-2024 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 98478 জন
বৈষম্যকে নিয়ে ভাবতে হলে আগে বৈষম্যের পর্যালোচনা দরকার।আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ছবির ক্যাপশন: স্বাধীন ৭১
LaraTemplate

বৈষম্যকে নিয়ে ভাবতে হলে আগে বৈষম্যের পর্যালোচনা দরকার। কিন্তু বাংলাদেশের পরিসংখ্যান কী? বাংলাদেশের পরিসংখ্যানের বড় সমস্যা হচ্ছে, এর ওপর মানুষের আস্থা নেই। যে পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে বৈষম্য নিরসন ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করা হবে, সেই পরিসংখ্যানই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। এখন আমাদের সঠিক পরিসংখ্যান নিশ্চিত করতে হবে। কেননা এর ওপর ভিত্তি করেই যেকোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈষম্যকে অ্যাড্রেস করতে হলে প্রথমে অর্থনীতিতে গণতন্ত্রায়ণ করতে হবে। অর্থাৎ অর্থনীতিতে গণতন্ত্রের প্রতিফলন থাকতে হবে।


বিগত সময়ে দেশের অর্থনীতি কিছু লোকের কাছে কেন্দ্রীভূত হওয়ার কারণে বিশাল আয়বৈষম্য ও অলিগার্ক শ্রেণীর সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অর্থনীতিতে গণতন্ত্রায়ণ করতে পারিনি। অর্থনীতিকে গণতন্ত্রায়ণ না করে জিডিপির আকার ও প্রবৃদ্ধির আকার দিয়ে দেশের মানুষের কোনো কাজে আসবে না। যে বৈষম্যের কথা বলছি, সেই বৈষম্য নিরসন করতে হলে অর্থনীতিতে গণতন্ত্রায়ণ ও সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এর অনুপস্থিতির কারণে অর্থনীতিতে প্রবেশের যার সম্ভাবনা আছে সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সুযোগ সে পাচ্ছে না। অর্থাৎ এর অনুপস্থিতির কারণে ব্যাংক খাত এমনকি সরকারের নীতিতে এর প্রতিফলন ঘটবে না। দেশের নীতিগুলো লক্ষ করলে দেখা যাবে, যেমন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ব্যবসা-বাণিজ্য দেয়া হয়েছে।


অর্থাৎ যাদের পছন্দ হয়েছে তাদেরই ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এটি তো বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য নয়। এর দায়ভার এখন পুরো জাতিকে, পুরো অর্থনীতি এমনকি প্রতিটি নাগরিককে বহন করতে হচ্ছে। বর্তমানে এর দু-তিনটি প্রভাব পড়ছে। এর একটি, অর্থনীতিতে ক্ষরণ হচ্ছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। তাদের প্রত্যেকের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের সম্পদ একটি গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সারা দেশের মানুষ এর দায় ভোগ করছে।


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দুটি বিষয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ করে ব্যয় করব। যখন জনগণকে আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব হবে তখন তারা দুটি সুবিধা পাচ্ছে। এক. যখন তার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে তখন অর্থনীতিতে বেশি অবদান রাখার সুযোগ পাচ্ছে। দুই. স্বাস্থ্যসেবায় তার ব্যয় কমে যাওয়ার কারণে ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। ফলে স্বাস্থ্যসেবা খাতে তার ব্যয় কমে যাওয়ায় অবশিষ্ট অর্থ পরিবারের উন্নয়নে ব্যয় করার সুযোগ পাচ্ছে। একইভাবে শিক্ষায় বিনিয়োগ করা হলে সাধারণ মানুষ এর সুফল পাবে। জনমিতিক লভ্যাংশ পেতে হলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।


সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেশের সব খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। কিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা কোনো জবাবদিহিতা নেই। সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। দেশে রাজনৈতিক জবাবদিহিতা একেবারেই নেই। দিনশেষে জনগণের কাছ থেকেই রাজনৈতিক জবাবদিহিতা আসতে হবে। জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকতে হবে। কারণ জনপ্রতিনিধির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাকে ভোটের জন্য বারবার জনগণের কাছে যাওয়া। ফলে জনপ্রতিনিধির একটি দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা তৈরি হয়। এ প্রক্রিয়াই পরিশুদ্ধ ও সংশোধনের প্রক্রিয়া। এর বাইরে বিশ্বে আর কোনো প্রক্রিয়া নেই। কিন্তু অস্থায়ীভাবে কিছুদিন অনেক কিছুই করা যাবে এবং অনেকেই অনেক কথা বলছে। যত কথাই বলা হোক না কেন, যদি কোনো জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা না থাকে এবং বারবার জনগণের কাছে জনপ্রতিনিধিকে যেতে না হয় তাহলে কোনো কিছুই কাজ করবে না। দিনশেষে যতই সংস্কার করা হোক এবং সংস্কারের আলাপ করা হোক—একটি সময়ে যার যার সুবিধামতো এ সংস্কার চলে যাবে। একমাত্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়ই এটি করা সম্ভব।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ স্বাধীন ৭১

সর্বশেষ সংবাদ
notebook

কয়রার দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন