নিজাম উদ্দীন, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:।।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রম বেড়েই চলছে। কিশোরগঞ্জ করিমগঞ্জের বিভিন্ন খাবার হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় জায়গায় শিশুদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে শিশুশ্রম বন্ধে কঠোর আইন থাকলেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। দারিদ্র্য, অশিক্ষা আর পেটের দায়ে কখনও অটোচালকের আসনে, কখনো ভাঙারির দোকানে আবার কখনো হোটেল -রেস্তোরাঁয় কাজ করতে দেখা যায় ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু কিশোরদের।
শুধু তাই নয়, অহরহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ যেমন বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, নির্মাণকাজ, হোটেল রেস্তোরাঁ, ভাঙারী দোকান আশঙ্কাজনক হারে দিনদিন বাড়ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা সরকারিভাবে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ায় দিন দিন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে চলছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, করিমগঞ্জের বিভিন্ন হোটেল শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে রেস্তোরাঁতে অসংখ্য শিশু হোটেল রেস্তোরাঁয় কম পারিশ্রমিকে সহজে পাওয়া যায় বলে মালিকের প্রথম পছন্দ শিশু শ্রমিক। সাম্প্রতিক সময়ে করিমগঞ্জ উপজেলায় ব্যাটারী চালিত রিকসা ও অটোরিকশার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের চালকের আসনে দেখা যাচ্ছে।
জাতিসংঘ প্রণীত শিশু অধিকার সনদে ১৮ বছরের কম বয়সী সবাইকে শিশু বলা হয়েছে বাংলাদেশের নানা আইনে ১৫ বছরের কম বয়সী সবাইকে শিশু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আহমাদ ফরিদ বলেন, শিশুদের শ্রমে নিয়োগ বেআইনি ও নিন্দনীয় কাজ শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণে সরকারি আইনের প্রয়োগ না থাকায় করিমগঞ্জে শিশুশ্রম বাড়ছে। আইনের সঠিক প্রয়োগ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শিশুশ্রমের কারণ ও প্রতিকার শিশুশ্রম কথাটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত সাধারণত শিশুশ্রম বলতে বুঝায় অল্প বয়সে কোনো কাজ শিশুদের দিয়ে করিয়ে নেয়াকে শিশু শ্রম বলে। কথায় আছে আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ বর্তমানে কথাটির মর্মার্থ সংকোচিত হয়ে পড়েছে; কারণ বর্তমান সময়ে শিশু শ্রম একটি রাষ্ট্রীয় ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।
সমাজ ও রাষ্ট্রের সুষ্ঠু বিচক্ষণতার অভাবে ভবিষ্যৎ প্রজšে§র বিরাট একটি অংশ নিজেদের সক্রিয়তা হারাতে বসেছে বাস্তবতার কাছে হার মানতে হয় দরিদ্র ও অসচ্ছল পরিবারের মানুষদের। তাই তো পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে অভিভাবকরা নিজেদের শিশুদের কাজে লাগিয়ে দেন। এতে তারা কল-কারখানা থেকে শুরু করে পাথর ভাঙা, মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করা, বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টসহ গাড়ির গ্যারেজ, দোকানপাটে কাজ করে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, যারা ৫-১৪ বছর বয়সী শিশু যাদের বেতন বা অবৈতনিক উভয় ক্ষেত্রে এক বা একাধিক ঘণ্টা (প্রতি সপ্তাহে) কাজ করে তাদের শিশু শ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় অন্যদিকে জাতিসংঘ শিশু জরুরি তহবিল (ইউনিসেফ) শিশুশ্রমকে এমন কোনো কার্যকলাপকে সংজ্ঞায়িত করে যা শিশুর স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে প্রভাবিত করে।
যদি শিশুশ্রমটা আটকানো না যায় তাহলে স্বপ্ন দেখা শিশুর স্বপ্নগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাবে বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ ধারায় শিশুদের সুবিধা প্রাপ্তি-সংক্রান্ত বিশেষ আইন রয়েছে; যা শ্রম আইন ২০০৬ নামে পরিচিত। এতে বলা রয়েছে কাজে যোগদানের কমপক্ষে বয়স ১৪ বছর আর ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে ১৮ বছর কিন্তু দেখা যাচ্ছে ১৪ বছর হওয়ার আগেই শিশুদের বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে দিচ্ছে; তাছাড়া একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য যেসব কাজ ঝুঁকিপূর্ণ সেসব কাজে কোমলমতি শিশুদের নিয়োগ করা হচ্ছে, যা মোটেও উচিত নয়।
এর একটি প্রধান কারণ হলো, শিশু শ্রমিকদের তুলনামূলকভাবে কম মজুরি দিয়ে কাজ করানো যায় তাই নিয়োগকারীরা শিশুদের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লাগায় এবং কাজ বেশি করিয়ে নেয়। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন ২০১৮-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে, এতে বলা রয়েছে কেউ যদি শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেয় তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। কিন্তু অশিক্ষা, অসচেতনতা এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে শিশুশ্রম মুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে প্রধান বাধা। তাই শিশুশ্রম রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
১৯৯২ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) শিশুশ্রম বন্ধ করতে কর্মসূচি গ্রহণ করে সেই লক্ষ্যে ২০০২ সালের ১২ জুন থেকে শ্রম সংস্থাটি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতি বছর বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস পালন করে আসছে বাংলাদেশে ও দিবসটি পালন করে আসছে, কিন্তু এটি এমন একটি সমস্যা যা নিয়ম করে সমাধান করা সম্ভব না, প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করে এগিয়ে যাওয়া প্রতিটি শিশুর সুস্থ ও নিরাপদভাবে বেঁচে।
থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে যেতে হবে। শিশুশ্রমের মৌলিক কারণগুলো খুঁজে বের করে সমাধান করতে হবে শিশুদের সুস্থ ও উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য যুগোপযোগী কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শিশুশ্রম অধিকার সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে এক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
শিশুশ্রম দমনে কঠোর আইন বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে একটি সুস্থ সুন্দর রাষ্ট্র এবং আদর্শ জাতি গঠনে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের সবার দায়ি?ত্ব ও কর্তব্য। তবেই আজকের শিশুরা আগামীতে রাষ্ট্র ও জাতি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।