হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় বাবার বটির আঘাতে মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এঘটনায় এলাকাজুড়ে চলছে তোলপাড়। সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের কুড়িশাইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পূর্ণিমা রানী দাশ (২২) ওই গ্রামের মতি লাল দাশের মেয়ে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল রাতেই নিহত পূর্ণিমা রানী দাশের মা অনিরানী দাশ বাদী হয়ে আটককৃত মতি লাল দাশকে আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় হত্যা দায়ের করা হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ছয় মাস আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যের জেরে পূর্ণিমা রানী স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি কুড়িশাইলে ফিরে আসেন।
স্বামীর বাড়িতে থাকার সময় মোবাইল ফোনে অন্য পুরুষের সঙ্গে যোগাযোগ ও সন্দেহজনক চলাফেরার অভিযোগে দাম্পত্য সম্পর্কে ভাঙন ধরে। পরে পিত্রালয়ে ফিরে আসার পরও পূর্ণিমা বিভিন্ন সময় মোবাইলে কথা বলতেন এবং সম্প্রতি এক তরুণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে ঢাকায় পালিয়ে যান। পরিবার ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। এ ঘটনার পর থেকে পরিবারটিকে স্থানীয়রা কটূ মন্তব্য করতে থাকে। এসব মন্তব্যে মানসিকভাবে চাপে পড়েন পূর্ণিমার বাবা মতি লাল দাশ।
গতকাল সোমবার দুপুরে এমন পরিস্থিতিতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘুমন্ত মেয়ের মাথায় বটি দিয়ে আঘাত করেন তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় মতি লাল নিজেই গ্রাম পুলিশসহ মেয়েকে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পূর্ণিমাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং অভিযুক্ত পিতা মতি লাল দাশকে আটক করে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর পরই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মতি লাল দাশ ধর্মভীরু ও ভক্তিমূলক গানের সঙ্গে যুক্ত একজন মানুষ। মেয়ের আচরণ ও প্রতিবেশীদের কটূ মন্তব্যে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে তিনি। ক্ষোভ ও লজ্জা থেকে তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটান। এই ঘটনায় শান্ত কুড়িশাইল গ্রাম এখন শোকে নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, সামাজিক চাপে এই পরিণতি যেন আর কোনো পরিবারকে গ্রাস না করে।
মোঃ ফয়েজ উদ্দিন